টেকসই উন্নয়নের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশও অংশীদার হতে চায়, দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ পুলিশের অবদান নিশ্চিত হোক এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য। টেকসই উন্নয়নের পূর্বশত টেকসই অবকাঠামো আর টেকসই অবকাঠামো গড়তে নিরাপত্তা ও স্থিতিবস্থার কোন বিকল্প নেই, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিবস্থা ধরে রাখতে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে, নতুন যুগের চাহিদার সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশ পুলিশেরও গৃহিত হয়েছে যুগান্তকারী কিছু ভবিষ্যত পরিকল্পনা।
অত্যাধুনিক হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। এই বাহিনীতে যুক্ত হলো এভিয়েশন ইউনিট। ইতিমধ্যে দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে ইউনিটটি। এরই মধ্যে হেলিকপ্টার কেনার অনুমোদন মিলেছে। এ ছাড়া বাহিনীতে আনা হচ্ছে নতুন আধুনিক আর্মড পারসোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), হেলিকপ্টর, আর্মড-ফোর গাড়ি, অত্যাধুনিক নেট গান, স্নাইপার রাইফেল, থ্রু ওয়াল ইমেজিং ডিভাইস, রাডার (রেঞ্জ-আর) বা আধুনিক দূরবীন, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, গ্যাস গান, অচেতন করার গ্যাসসহ আরও অনেক কিছু।
পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া আগে থেকেই চলছিল। সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অত্যাধুনিক সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা বেশি দেখা দেয়। সূত্রগুলো জানায়, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালানো পর পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। জঙ্গি বা অপরাধীদের জীবিত ধরাটা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু জীবিত ধরার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পুলিশ বাহিনীতে নেই। এ ছাড়া দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন বা জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন সরঞ্জাম এক জেলা থেকে আরেক জেলায় পৌঁছানোর কোনো ব্যবস্থা নেই পুলিশ বাহিনীতে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে যেতে হয় ঘটনাস্থলে। সেটিও আবার সময়সাপেক্ষ, যে কারণে নিজস্ব হেলিকপ্টারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ইকুইপমেন্ট) মো. কামরুল আহসান বলেন, পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া আগের থেকেই চলছিল। সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এটার প্রয়োজনীয়তা বেশি দেখা দিয়েছে। পুলিশের নতুন জিনিসপত্র বা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম আনার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন কিছু সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো যেভাবে চাহিদা দেবে সেই আলোকে সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে। একই সঙ্গে তাদের বর্তমানে যেসব সরঞ্জামের স্বল্পতা রয়েছে সেগুলোও দ্রুত কেনা হবে। সম্প্রতি গুলশান, শোলাকিয়া, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রূপনগরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বেশ কিছু আধুনিক সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। সেই আলোকে নতুন কিছু সরঞ্জাম সংগ্রহের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি পারসোনেল ক্যারিয়ার, যা দিয়ে দ্রুত সময়ে শক্ত দেয়াল ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করা যাবে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্টুরেন্টে অপারেশন থান্ডারবোল্ডে সেনাবাহিনী এ ধরনের আর্মড পারসোনেল ক্যারিয়ার ব্যবহার করেছিল। একই সঙ্গে আসামি ধরার জন্য নেট গান সংগ্রহ করার চিন্তাভাবনা চলছে। নেট গান আসামি আটকের একটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি। আসামির হাতে ছোরা বা বন্দুক থাকলেও দূর থেকে নেট গান ব্যবহার করে তাকে জালে আটকে ফেলা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আসামি পালানোর ঝুঁকি বা কাউকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার ঝুঁকি থাকে না। নেট গান হচ্ছে অপ্রাণঘাতী অস্ত্র, যা দিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে দাঙ্গা ও সন্ত্রাসী আটকের ক্ষেত্রে উন্নত দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নেট গান ব্যবহার করছে।
থ্রু ওয়াল ইমেজিং ডিভাইসের মাধ্যমে দেয়ালের ওপাশে জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের অবস্থান জানা যাবে। সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নারায়ণগঞ্জে মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী, রূপনগরে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম, গুলশানে ছয় জঙ্গি, কল্যাণপুরে ৯ জঙ্গিসহ ৩৪ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এসব জঙ্গিকে জীবিত আটক করা গেলে তাদের নেটওয়ার্কের অনেক অজানা তথ্য জানা সম্ভব ছিল। হামলার পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতাসহ নেপথ্য নায়কদের আইনের আওতায় আনা যেত সহজেই। এ কারণে এ ধরনের অভিযানে প্রয়োজন হয় অচেতন করার গ্যাস। এ ধরনের গ্যাস সংগ্রহ করারও চিন্তাভাবনা চলছে। পুলিশ বলছে, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আধুনিক স্নাইপার রাইফেল অত্যন্ত কার্যকর। নারায়ণগঞ্জে অপারেশন হিটস্ট্রং টোয়েন্টিসেভেনে ব্যবহৃত হয়েছিল অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল। পাশের একটি ভবন থেকে ভিতরে থাকা আসামির অবস্থান শনাক্ত করে গুলি চালানো হয়, যার একটি গুলি লেগেছিল জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরীর শরীরে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই গুলিতেই নিহত হয়েছে তামিম। পরে ময়নাতদন্তে তার শরীরে স্নাইপার রাইফেলের গুলি পাওয়া যায়।
গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। এ ছাড়া জঙ্গিদের হামলায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান, গুলশান বিভাগের এডিসি আবদুল আহাদ, গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম, র্যাব-১ অধিনায়ক তুহিন মুহাম্মদ মাসুদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অর্ধশত সদস্য আহত হন।
রূপনগরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ সহিদ আলম, পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিন ফকিরসহ চার পুলিশ আহত হন। আত্মঘাতী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ঝুঁকি দূর করতে মূলত এসব আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত বিভিন্ন বাসা-বাড়ি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। সম্প্রতি যেসব আস্তানায় অভিযান হয়েছে, এর প্রতিটিই জনাকীর্ণ এলাকায় হওয়ায় সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা বেশি ছিল। পুলিশ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সেগুলো মোকাবিলা করেছে এবং সাধারণ মানুষকে যে কোনো ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।’ এ ক্ষেত্রে দেয়ালের ওপারে বাসা-বাড়ির ভিতর থাকা আসামিদের মুভমেন্ট জানা অভিযানকারী দলের জন্য খুবই জরুরি। সে লক্ষ্যে আধুনিক রাডার সংগ্রহের চিন্তা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইসহ উন্নত বিশ্বের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ধরনের রাডার বা দুরবিন ব্যবহার করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের রাডারকে বলা হয় রেঞ্জ-আর। এগুলো হালকা এবং হাতে বহনযোগ্য।
দুটি হেলিকপ্টারের অনুমোদন : দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ এভিয়েশন ইউনিটের। এরই মধ্যে হেলিকপ্টার দুটি কেনার অনুমোদন মিলেছে। তবে অনুমোদন মেলেনি এসব পরিচালনার জন্য লোকবল। প্রস্তাবিত এ ইউনিটের প্রধান থাকবেন একজন অতিরিক্ত আইজি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এরই মধ্যে এভিয়েশন ইউনিটের জন্য ১৭২টি পদ সৃজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। চাওয়া হয়েছে দুটি হেলিকপ্টারসহ গাড়ি ও ৩৩ ধরনের সরঞ্জাম। হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে অভিজ্ঞ কর্মকর্তা প্রেষণে বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে পুলিশেও দক্ষ জনবল তৈরির কথা বলা হয়েছে। মার্চে প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বর্তমানে বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS